যেসব অভ্যাসে তলপেটে মেদ বাড়ে

ফাইল ফটো

তলপেটে মেদ জমা একদিকে ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আবার অন্যদিকে এতে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ে। পেটের মেদ ঝরানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজও। আমাদেরই দৈনন্দিন কিছু ছোট ছোট অভ্যাস এই মেদ বাড়াতে রাখে ভূমিকা।

মেদ বাড়ার জন্য দায়ী কিছু অভ্যাসকে দায়ী করেছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে হলো-

১. অনেকেই সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে একেবারে দুপুরের খাবার খান। কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া মেদ বাড়ার অন্যতম কারণ। এতে অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকে মানুষ। ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বা অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদি কোনো বেলার খাবার মিস হয়ে যায়, তবে চেষ্টা করুন অতিরিক্ত না খেতে কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেতে।

২. টিভি খেলা বা অন্যকিছু দেখতে দেখতে বা কাজ করতে করতে খেলে খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে মেদ জমার সম্ভাবনা থাকে। টিভি দেখতে দেখতে মুখরোচক খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটাও বাদ দিন। ভাজাপোড়া খাবার কিংবা চানাচুর ধরনের স্ন্যাকস আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোতে ক্যালোরি থাকে অনেক বেশি পরিমাণে। কোন কোন সময়ে আনমনে খাবার খান সেটা খুঁজে বের করবেন এবং এই অভ্যাস বাদ দেবেন।

৩. মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে মেদ জমে শরীরে। আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগি, তখন কর্টিসল নামের এক ধরনের হরমোনের নিঃসরণ হয়। এই হরমোন বাড়লে চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা প্রবলভাবে বাড়তে পারে। এছাড়াও কর্টিসল শরীরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় পেটে মেদ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় সেন্ট্রাল অ্যাডিপোসিটি। কর্টিসল আমাদের শরীরে আরেকটি হরমোন বাড়িয়ে দেয় যেটি ক্ষুধা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ফলে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা খুব জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন ও পছন্দের কাজ করুন মানসিক চাপ কমাতে। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

৪. রাত জাগা, ঘুম কম হওয়া এসব কারণেও পেটে মেদ জমে। কম ঘুমের সাথে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। রাত জাগলে ক্ষুধা লাগে। ফলে বাড়তি খাবার খাওয়া হয়। রাতে ক্ষুধা লাগলে অস্বাস্থ্যকর খাবারও খাওয়া হয় অনেক সময়।

৫. অনেকে দ্রুত খাবার খান। এই অভ্যাস পেটে মেদ জমে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। পেট ভরেছে কিনা সেটা বুঝতে মস্তিষ্কের ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। দ্রুত খেলে তাই বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে। ধীরে ধীরে খাবারের প্রতি মনোযোগ দিয়ে খেতে হবে।

৬. বড় প্লেটে খাবার খাবেন না। দেখা যায় বড় প্লেটে খাবার নিয়ে বসার পর পেট ভরে গেলেও প্লেটের খাবার শেষ করে উঠতে ইচ্ছে হয়। ফলে না চাইতেও বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায়। সমাধান হচ্ছে তাই ছোট প্লেটে খাবার খাওয়া কিংবা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া।

৭. সৌজন্যবোধ থেকেও বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায় আমাদের। দাওয়াতে গেলে কেউ প্লেটে জোর করে খাবার তুলে দিলে সেটা খাওয়া হয়ে যায়। আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে ক্ষুধা না থাকলেও রেস্টুরেন্টে বসে কিছু একটা অর্ডার দিয়ে ফেলি আমরা। এই প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে। তাই খাবার বিষয়ে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৮. সাদা আটা ও সাদা চাল খাওয়ার কারণেও পেটে মেদ জমে যেতে পারে। কারণ, ফাইবারসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ফেলে দেওয়া হয় এগুলো থেকে। ফাইবার আমাদের খাবারকে আস্তে আস্তে হজম করতে সাহায্য করে। ফাইবার ফেলে দেওয়ার কারণে খাবারগুলো দ্রুত হজম হয়। রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চাল, সাদা আটার মতো এমন প্রক্রিয়াজাত শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে মেদ জমার সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে লাল চাল বা ঢেঁকিছাঁটা চাল ও লাল আটা বা গোটা শস্যদানা বেশি খেলে মেদ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৯. লো ফ্যাট খাবার খান অনেকেই। মনে করেন লো ফ্যাট খাবার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু হয় উল্টো। এর কারণ হচ্ছে খাবার থেকে ফ্যাট ফেলে দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয় খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য। এতে করে বাড়তি ক্যালোরি ঢুকে যায় শরীরে, যা মেদ হিসেবে জমা হয় তলপেটে।

১০. শুয়ে বসে থাকা কিংবা শারীরিক পরিশ্রম না করা পেটে মেদ জমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। সপ্তাহে ৫ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে হাঁটলেই অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এতে পেটে মেদ জমার ঝুঁকিও কমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights